ভুতের গল্পঃ ২য় পর্ব

আমার ভুত দেখা
----------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------
ভুতের গল্প ১ম পর্বটা আসলে একটা গল্পই ছিল, কিন্তু আমার ভুত দেখা টা সত্যি ঘটনা। আসলেই সত্যি। যদিও ঘটনাটা ঘটার অনেকদিন পরে আমি কয়েকজন কে বলেছিলাম। আমি জানতাম যে, কেওই বিশ্বাস করবে না। সত্যিই কেও বিশ্বাস করে নাই। কিন্তু আমি জানি, আমার অস্তিত্বের মতই এটা সত্যি।

অনেক আগের কথা, ১৯৯৮ অথবা ৯৯ সনে। আমি তখন ক্লাশ থ্রী অথবা ফোরে পড়ি। আমার খালু ছিলেন ফুড ইন্সপেক্টর। উনার পোস্টিং ছিল তখন ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায়। ভাঙ্গায় কুমার নদের পাড়ের গোডাউন টার ইনচার্জ ছিলেন আমার খালু। আমরা আর আমার খালারা অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকি। শুধু খালু একাই চাকরীর জন্য ঢাকার বাইরে থাকত। একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে(নাকি বর্ষায়, ঠিক মনে নেই) আমি, আমার আম্মা, খালার, খালাতো বোনেরা, আমরা সবাই মিলে বেড়াতে গেলাম খালুর ওখানে, ২ রাত ৩ দিনের জন্য। গোডাউনের যায়গাটা বেশ বড়। ভেতরে অনেক বড় বড় কইয়েকটা গুদাম ঘর, অফিসারদের জন্যে বিশাল বড় বড় দুটি রুম। সব কিছুই পাকা করা। মফস্বল শহর বলে ইলেক্ট্রিসিটিও আছে, টিভি আছে, তার সাথে আছে ডিশের লাইন। আমাদের জন্যে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, একবার কারেন্ট গেলে ৩-৪ ঘন্টার আগে আর আসত না। কিন্তু গোডাউনের সাথে লাগোয়া ছিল কুমার নদ। আমরা খালাতো বোনেরা ঢাকায় বড় হলেও পুকুর, নদী, খাল-বিল আমাদের খুবই পছন্দ। গোসল করতে নামলে টেনেই উঠানো যেত না ছোটবেলায়। এমন কি সাঁতারও আমি নিজের চেষ্টায় একা একা শিখেছি কোন ধরনের অবলম্বন ছাড়া। যাই হোক, এবার মূল ঘটনায় আসি।  জায়গাটায় অনেক রকমের গাছ ছিল, ঝোপ-ঝাড় অথবা বোনের মত না কিন্তু, সুন্দর বাগানের মতই সাজানো গুছানো। অনেক গুলো আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, নারিকেল গাছ, গাব গাছ, অনেক রকম ফুলের গাছ। থাকার জন্য যে বড় ঘরদুটি ছিল, তার মধ্যে একটা ঘরের জানালার সামনেই ছিল ছোট্ট একটা হাস্নাহেনা ফুলের গাছ। ৪-৫ ফিট লম্বা গাছটা ভরে ছিল সাদা সাদা ফুলে। সন্ধ্যার সময়ে সেই ফুলের গন্ধে চারপাশটা ভরে যেত। বড়রা বলত হাস্নাহেনা ফুলের গন্ধে নাকি সাপ আসে, আরো কি কি যেন আসে... ৩ টা দিন ই অনেক ব্যস্ত কেটেছিল। অন্যান্য ইন্সপেক্টর দের বাসায় দাওয়াত, টি এন ও'র বাসায় দাওয়াত, জ্যোৎস্না রাতে চালের বস্তা নিয়ে আসা বিশাল বড় বার্জ(বড় লঞ্চ টাইপের, এটা তে খাদ্য সামগ্রী বহন করা হয়, অনেকটা, মালবাহী লঞ্চ)এ ওঠা, আর কুমার নদীতে গোসল তো আছেই। প্রতিটা মুহুর্ত বিশ্রামহীন, রোমাঞ্চকর। কিন্তু সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল সেই ছোট্ট হাস্নাহেনা গাছটাকে ঘিরেই।

সারাদিন কি করেছিলাম, ঠিক মনে নাই। কিন্তু ২য় দিনের রাতটা শুরুই হয়েছিল সীমাহীন আনন্দ দিয়ে। সন্ধ্যার পর আমরা সবাই মিলে দল বেঁধে নেমেছিলাম কুমার নদে গোসল করতে। রাতে কার বাসায় যেন দাওয়াত ছিল। দাওয়াত খেয়ে আসার সময় রাস্তা থেকে নামার সময় পাথর বাঁধানো ঢালে পা ছিলে ফেললাম আমি। তারপর ব্যাথায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুম দিলাম আগে আগেই।  আগে আগে ঘুমালে যা হয়, তাই হল, মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ তখনও খুলি নাই। হঠাৎ করে শুনলাম, কে যেন নাকি সুরে বলছে, "তুই কে রে?"। কথাটা আসছিল আমার মাথার পেছন থেকে, তাই আমি ঘাড় না ঘুরালে কে বলছে আমি দেখতে পারব না। তখন আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। চোখ খুলে দেখতে চেষ্টা করলাম যে, আসলে আমি কোথায়। দেখলাম, খাটের এক কোনায় আমি, আমার ডান পাশে আমার খালাতো বোনেরা শুয়ে আছে । আমি আমার আম্মা কোথায় আছে দেখতে চেষ্টা করলাম, মাথা না উঠিয়েই, পারলাম না। আম্মা খাটের অন্য কোনায় ছিল। আমি আর আমার আম্মার মাঝে ছিল ৩টা খালাতো বোন, তাই আম্মাকে খুঁজে পাই নাই। কারেন্ট ছিল না, ঘরে একটা হ্যারিকেন জ্বলছিল। শব্দ টা আমি আবারো পেলাম। "তুই কে? কোথা থেকে আসছিস?"। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে ততক্ষনে। শেষ চেষ্টা হিসেবে আমার পাশের খালাতো বোনটাকে আস্তে করে গুঁতা দিলাম হাত দিয়ে, কারন গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছিল না আমার। কিন্তু ও তখন গভীর ঘুমে। তারপর আমি আস্তে আস্তে মাথাটা ঘুরিয়ে যা দেখলাম, তা দেখার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দেখি আমার মাথা বরাবর ৪-৫ হাত দূরে একটা সবুজ মানুষের মতন অবয়ব দাড়ানো। মানুষের মতনই দেখতে, কিন্তু মাথায় চুল নাই, গায়ে কোন কাপড় নাই, আর চোখ দুটো সবুজ, জ্বলজ্বল করছে বিড়ালের মত। সবুজ অবয়বটা দাঁড়ানো ছিল ঐ জানালাটার সামনে যেইটার সামনে হাস্নাহেনা গাছটা। হাস্নাহেনা ফুলের গন্ধ তখন পাওয়া যাচ্ছে। মনে পড়ল আম্মা আর খালার কথা, হাস্নাহেনা গাছ থাকলে অনেক কিছুই আসে। আমি তাকালাম দেখে ঐ জিনিসটা আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল, "তুই কে রে? কোত্থেকে আসছিস?"। আমি যেন ভয়ে একদম জমে গেলাম। তারপর আর কিছুই মনে নাই। ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছিলাম নাকি বলতে পারব না, কারন কিছুই মনে নেই। পরের দিন সকালে উঠলাম, সুন্দর সকাল। মনে হল রাতের ঘটনাটা কেওই বিশ্বাস করবে না, সবাই বোকা বলবে আমাকে, তাই কাওকেই বলি নাই সেদিন। পরে বলেছিলাম আমার খালাতো বোনদের, ওরা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু অবিশ্বাস করে নাই।


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মেটাবোলিজম

ডিমখোর না-ডিম

বই পড়াঃ ১ম পর্ব

ভুতের গল্পঃ ১ম পর্ব

ডায়েট/ক্রাশ ডায়েট