মেটাবোলিজম
"আমার মেটাবোলিজম অনেক কম,
আমি তো বাতাস খেলেও মোটা হই!"কিছু মানুষ আছে, যারা অনেক বেশি খায়, তাও মোটা হয় না। অথচ আমরা খুব কম খেলেও গায়ে লেগে যায়,
তাই না? আর আমরা মনে করি, এর জন্য দায়ী একমাত্র আমাদের দুর্বল মেটাবোলিজম। আসলে মেটাবোলিজম ওজন বাড়ানো
অথবা কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কোন ভূমিকা পালন করে না। বরং আমরা প্রতিদিন কতটুকু
ক্যালরি গ্রহন করি আর কতটুকু খরচ করি, এর পার্থক্যই প্রধান ভূমিকা পালন করে।
মেটাবলিজম এর সাথে আমাদের
মোটা অথবা চিকন হওয়ার সম্পর্ক কি?মেটাবোলিজম কম হলে ওজন
শুধু বাড়বেই, আর যার মেটাবোলিজম বেশি
তার ওজনই কমবে এ ধারণা ভুল। তবে আমরা যারা ওজন কমাতে চাই, তাদের মধ্যে কারো মেটাবোলিজম কম হলে, তার ওজন কমার হার কমে যেতে পারে। আর ভাল মেটাবোলিজম ওজন
কমানোর গতিকে কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। সাধারণত, যে স্বাস্থ্যবান তার মেটাবোলিজম বেশি থাকে, অথচ আমরা মনে করি, তার মেটাবোলিজম কম। অর্থাৎ, যারা অনেক মোটা,
তারা খুব সহজেই ওজন কমাতে পারে, কারন ওজন কমাতে তাদের বাড়তি মেটাবোলিজম কিছুটা সাহায্য করে।
আবার অনেকে বংশগত ভাবে বেশি মেটাবোলিজমের অধিকারী হয়, যার ফলে সে অল্প চেষ্টা করে ফিট থাকতে পারে। কিন্তু সবার
মেটাবোলিজমই বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে। আর মেটাবোলিজম কম হলেও ওজন কমানো যাবে,
হয়তো সময় একটু বেশি লাগবে, তবে সেটা খুব বেশি না। তাই ওজন কমানোর সফরে দূর্বল
মেটাবোলিজমই আমাদের চরম শত্রু, এটা মনে করার কোন
কারণ নেই।
আমাদের শরীর গঠিত হয়েছে বিভিন্নরকম কোষ দিয়ে। মাংসপেশি এক ধরনের কোষ দিয়ে গঠিত, হাড় আরেক ধরনের কোষ দিয়ে, রক্ত আরেক ধরনের, আবার মস্তিষ্ক আরেক ধরনের। এরকম নানান রকমের কোষ রয়েছে যা নানান রকম কাজ করে, যে কাজগুলো করতে দরকার হয় শক্তি। আবার প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোষও তৈরী হয়, এ নতুন কোষ তৈরীতেও শক্তি প্রয়োজন হয়। এছাড়া, হাঁটাচলা করা, কথা বলা, নিশ্বাস নেওয়া, খাবার হজম করা, যেকোন ধরনের শারীরিক পরিশ্রম, এসব করতেও আমাদের শক্তি প্রয়োজন। এ সব শক্তিই আসে খাবার থেকে। যে প্রক্রিয়ায় খাবার থেকে শক্তি উৎপন্ন হয় আর আমাদের শরীর সে শক্তিকে কাজে লাগায়, সে পক্রিয়াই হল মেটাবোলিজম অথবা বিপাক ক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার দুটি ধাপ, প্রথম ধাপে(ক্যাটাবোলিজম) খাবার ভেঙ্গে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে, পরের ধাপে(এনাবোলিজম) সে ছোট ছোট ভাগ গুলো মিলে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান গঠন করে। এ ধাপে কার্বোহাইড্রেট ভেঙ্গে রূপান্তরিত হয় গ্লুকোজে, প্রোটিন রূপান্তরিত হয় এমিনো এসিডে, আর ফ্যাট হয় ফ্যাটি এসিড।
আমি এত কম খেয়েও
মোটা হচ্ছি, আর ও এত বেশি
খেয়েও মোটা হয় না কেন?
আমাদের ওজন
বাড়বে নাকি কমবে তা নির্ভর করে আমাদের খাবার গ্রহন করার পরিমান, শারীরিক পরিশ্রম, আমাদের ওজন, বয়স, আমরা ছেলে নাকি মেয়ে এবং মেটাবোলিজমের উপর। সাধারণত ছেলেদের প্রতিদিন মেয়েদের থেকে বেশি ক্যালরি দরকার হয়। যে কারণে একই বয়সী ছেলেরা বেশি খেয়েও ফিট থাকে, অন্যদিকে মেয়েদের ফিট থাকতে হলে ডায়েট অথবা এক্সারসাইজ করতে হয়। এছাড়া অনেক সময় না বুঝে ডায়েট করতে যেয়ে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আমরা অনেক কম ক্যালরি রাখি। এত কম ক্যালরি আমাদের মেটাবোলিজম কমিয়ে দেয়। যার কারনে কম খেলেও আশানুরূপ ওজন কমে না। মাঝামাঝি ধরনের ওজনের দুজন মানুষকে তুলনা করলে দেখা যায়, যে সারাজীবন একই স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিল, সে মাঝামাঝি পরিমান খেয়েও মোটা হয় না। অপর দিকে যে বাড়তি ওজন কমিয়ে ঐ ওজনে এসেছে, সে কম খেয়ে নিজের মেটাবোলিজম কিছুটা দুর্বল করে ফেলেছে। যার ফলে তাকে ওজন কমানোর পরেও খাবারের পরিমান নিয়ে সচেতন থাকতে হয়।
আমরা কিভাবে
আমাদের মেটাবোলিজম বাড়াতে
পারি?
১। ডায়েট
চার্ট- ডায়েট চার্টে অতিরিক্ত কম ক্যালরি রাখা যাবে না। কার্বোহাইড্রেট কম রেখে প্রোটিন বেশি রাখলে সেটা শরীরে কাজে দিবে, মেটাবোলিজম ও ঠিক রাখবে। প্রোটিন মেটাবোলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
২। ব্যায়াম- মাংসপেশি বেশি হলে শারীরিক কর্মকান্ডে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, ফলে মেটাবোলিজম বাড়ে। ব্যায়াম করে মাংসপেশি গঠন করতে পারি আমরা।
৩। গ্রীন
টি- টি মেটাবোলিজম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, খাওয়ার আধা ঘন্টা পর গ্রীন টি খাওয়া ভাল।
৪। সকালের
নাস্তা- সকালের নাস্তা কখনোই বাদ দেওয়া উচিৎ না। বরং স্বাস্থ্যকর নাস্তা মেটাবোলিজম বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৫। লেবু
পানি- ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কুসুম গরম পানিতে লেবু পানি মেটাবোলিজম ত্বরান্বিত করে।
৬। পানি-
বেশি বেশি পানি পান করলে মেটাবোলিজমের হার বেশি থাকে...
পরিশেষে,
"মেটাবোলিজম" শব্দটাকে আমরা যতটা সহজ ভাবি, প্রক্রিয়াটা আসলে অতটা সহজ নয়। এটা অনেক জটিল একটি প্রক্রিয়া, যা মানব দেহে শক্তি উৎপন্ন করে। আর এ শক্তি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। মেটাবোলিজমকে ব্যাখ্যা করতে যেয়ে এ পর্বটি বেশ জটিল হয়ে গিয়েছে। এটাকে আরো সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে আরো অনেক লিখতে হত। তারপরও মেটাবোলিজমকে ব্যাখ্যা করার আমার ছোট্ট প্রচেষ্টা এটি...
Great post
ReplyDelete