ভুতের গল্পঃ ১ম পর্ব

'ঔষুধ হল ভুতমাইসিন'
___________________________________________________________

আপনারা যারা ভুতে বিশ্বাস করেন না, কিংবা ভুতদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করেন, অথবা ভুত সেজে অন্যদের ভয় দেখান, তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই আমার এই লিখা। ভুত এক বিরল প্রজাতির প্রানী(!)। এদের দেহ নেই কিন্তু প্রান আছে। এই প্রাণকে আমরা আত্মা বা soul বলে থাকি। আপনারা যতই এদের অস্তিত্ব নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করেন না কেন এরা কিন্তু কাওকে সহজে দেখা দেয় না। কিন্তু একবার... আমার পরিচিত একজনের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে এক ভুত দেখা দিয়েছিল। সেই কাহিনীই বলছি...

আমার কাহিনীটির প্রধান চরিত্র কুদ্দুস ভাই(কাল্পনিক নাম; ভাই এর অনুরোধে আসল নাম গোপন করা হয়েছে)। এই কুদ্দুস ভাই কয়েকদিন পরপরই গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করত। যদিও সেসব গার্লফ্রেন্ডরা কুদ্দুস ভাইকে নিজের ইচ্ছায়ই ছেড়ে যাইত(অন্তত তারা তা-ই মনে করত)। তাই তাদের মনে কুদ্দুস ভাই এর জন্যে কোন রাগ-ক্ষোভ কিছুই থকত না, বরং থকত সমবেদনা। তো কুদ্দুস ভাই এর এক গার্লফ্রেন্ড এবং কুদ্দুস ভাইকে নিয়েই মূল ঘটনা।

কুদ্দুস ভাই ছিল "roof dating"এ অস্তাদ। সে সবসময়ই তার গার্লফ্রেন্ডদের তার বাসার ছাদে invite করত, সন্ধাবেলায়। এবং বেশ কয়েকদিন roof dating করার পর, কুদ্দুস ভাই আর তাদের ত্যাদোঁড় কাজের ছেলে মিলে করত দারুন এক নাটক। যখন বাসায় কেওই থাকত না, কুদ্দুস ভাই roof এ বসে তার গার্লফ্রেন্ড-এর সাথে অন্তরঙ্গীন মুহুর্ত কাটিয়ে সিগনাল দিত কাজের ছেলেটাকে। অমনি ছেলেটি তাদের ছাদের সাথে লাগোয়া আমগাছ টাতে উঠে বিকট চিৎকার আর বিদ্ঘুটে আওয়াজ করত। তখন ভয় পাওয়ার ভান করে কুদ্দুস ভাই অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করত। আর তার গার্লফ্রেন্ডরা এক ছুটে বাসা থেকে বের হয়ে যেত। আর তার পরে ঐ মেয়ে কুদ্দুস ভাইয়ের ছায়াও আর মারাতো না।

এইবার মূল কাহিনীতে আসি...
সেই আম গাছের সাথে লাগোয়া ছোট্ট এক গাব গাছে ছিল সত্যিকারের এক ভুতের বাস। তার মধ্যে সেই ভুত আবার পড়েছে নতুন প্রেমে। ভুত সমাজের সব কিছুই যে আমাদের উল্টো সেটা তো আর নতুন করে বলার দরকার নেই, মানে তারা দিনে ঘুমায়-রাতে জাগে, আবার উলটো হাটে ইত্যাদি। যাই হোক, আমাদের এই গাব গাছের ভুতের নতুন প্রেম হওয়াতে সে সারাদিন না ঘুমিয়ে গার্লফ্রেন্ড-এর সাথে ফোনে কথা বলত। তাছাড়া recently তাদের GhostLink আর Monster Phone কোম্পানীর কল রেট সারা দিন ০(শূণ্য)/সেকেন্ড ছিল। তো, সারা দিন ফোনে কথা বলে যেই সন্ধাবেলা ভুতটার চোখ লেগে আসত, তখন সেই ত্যাদোঁড় কাজের ছেলের বাঁদর মার্কা চিৎকার শুনে ঘুমের বারোটা বেজে যেত। নিতান্ত্যই বালোমানুষ ভুত বলে সে ব্যাপারটা কয়েকবার সহ্য করলো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ভুতেরও ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো। এবং এক সন্ধ্যায় কুদ্দুস ভাইদের কাজের ছেলেটার ঘাড় মটকে দেওয়ার তীব্র আকাঙ্খা তার দমন করতে হল, কারন একবিংশ শতাব্দীতে ভুতদের নিয়ম অনেক কড়া। তাদের কোনমতেই মানুষের সামনে আশার নিয়ম নেই ভুত কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া। অতএব এই গাব গাছের গোবেচারা বতটি ভুত কাউন্সিলে complain করলো। ভুত কাউন্সিল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে দেখলো যে, আসল দোষী আমাদের কুদ্দুস ভাই ছাড়া আর কেউ নয়। তো তারা গাব গাছের ভুতকে এক অভিনব idea দিল।

একদিন সন্ধায়...
যথারীতি কুদ্দুস ভাই তার নতুন গার্লফ্রেন্ড জরিনা(কাল্পনিক নাম)কে নিয়ে তাদের roof এ এসেছে dating করতে। কিন্তু কাজের ছোকরা গেছে গ্রামে। তাই ভুত পর্বের আগে বেশ কয়েকবার roof dating কয়ার সময় কুদ্দুস ভাইয়ের কাছে আছে। যেই আমাদের জরিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কুদ্দুস ভাই চুমু খেতে যাবে, অমনি আম গাছ থেকে ভেসে এল বিকট চিৎকার। প্রথমে কুদ্দুস ভাই মনে করল এটা বুঝি কাজের ছেলেটারই কাজ। কিন্তু সাথে সাথেই মনে পড়লো যে ও তো গ্রামে গিয়েছে। ঠিক তখনই, আম গাছ থেকে বিকট চেহারার বিশাল বড় এক নারী ছায়ামুর্তী কুদ্দুস ভাইয়ের দিকে এগিয়ে এলো, আর ততক্ষনে জরিনা বেগম হাওয়া। আর কুদ্দুস ভাই??? এবার সত্যি সত্যি অজ্ঞান হলো।

এখন...
কুদ্দুস ভাই বেশ কামেল একজন মানুষ। দৈনিক পাচ অয়াক্ত নামাজ পড়েন। শুনতেছি, সামনে কোরবানীতে নাকি হজ্জে যাবেন। একেই বলে 'ভুতমাইসিন'। 


Comments

  1. ভুতের গল্প পর্ব ২ কবে আসবে???

    ReplyDelete
  2. আজকেই পাবা ইনশা-আল্লাহ...

    ReplyDelete
  3. অনেক মজা হইসে এইটা...

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মেটাবোলিজম

ডিমখোর না-ডিম

বই পড়াঃ ১ম পর্ব

ডায়েট/ক্রাশ ডায়েট